,

সেন্টমার্টিনের ১২০০ ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ উপকূলীয় কয়েকটি এলাকা। এরই মধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ১২০০ ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এতে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষজন।

রবিবার (১৪ মে) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সাবরাং ইউনিয়ন, সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ১২০০ ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে গেছে। কিছু ঘরবাড়ি পুরোপুরি, কিছু আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও বাতাস বইছে, কোথাও কোথাও গাছপালা ও কাঁচা বাড়িঘর ভেঙে গেছে। তবে জলোচ্ছ্বাস হয়নি।’

এর আগে বিকাল ৩টার দিকে সেন্টমার্টিন উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মোখা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‌‘বিকাল ৩টার দিকে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। এতে ওসব এলাকার ঘরবাড়ি ও গাছপালাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ভেঙে গেছে। তবে আঘাতের পর বড় বিপদের শঙ্কা কেটে গেছে। যা ক্ষতি হয়েছে, এর চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।’

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের সাবরাং ইউনিয়নের সদস্য (মেম্বার) আবদুস সালাম বলেন, ‘আমার পুরো এলাকা নাফ নদ ঘেঁষা। এখানে ছয় শতাধিক ঘরবাড়ি। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে চার শতাধিক ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এতে প্রায় দেড় হাজার মানুষজন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সরকারি সহায়তা দরকার।’

নাফ নদ তীরবর্তী জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা চম্পা বেগম বলেন, ‘ঝোড়ো বাতাস শুরু হওয়ার পর পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাই। ঝড় শেষে ফিরে দেখি, ঘরবাড়ি তছনছ। আশপাশের সবার ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এখন কোথায় আশ্রয় নেবো বুঝতে পারছি না।’

একই পাড়ার বাসিন্দা মো. আমিন বলেন, ‘এ রকম ঝোড়ো বাতাস আগে কখনও দেখিনি। পাড়ার সবাই আতঙ্কে ছিলাম, আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে ছিলাম। আল্লাহ রক্ষা করেছেন। তবে পাড়ায় ফিরে দেখি, নিজেদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। অনেকের ঘরবাড়ি পানিতে ভেসে গেছে। এখন নিরুপায় হয়ে বসে আছি।’

ঘূর্ণিঝড়ে জেলার ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘জেলার ১০ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এর মধ্যে দুই শতাধিক আংশিক, বাকিগুলো পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্টমার্টিন। এই দ্বীপের ১২০০ ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আহত হলেও এখন পর্যন্ত নিহতের খবর পাওয়া যায়নি।’

ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি এলাকা ঘুরে টেকনাফ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ সদর, পৌর এলাকা, সাবরাং, ডেইলপাড়া, জাদিমুড়া, কোনারপাড়া ও গলাচিপা এলাকায় প্রচুর গাছপালা এবং ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। উড়ে গেছে ঘরের চাল। এসব এলাকার মানুষকে সড়ক থেকে গাছ সরাতে দেখা গেছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, এখনও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঝোড়ো বাতাস বইছে। মাঝেরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া ও উত্তরপাড়ার বাড়িঘর এবং গাছপালা ভেঙে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ঝড়ে সেন্টমার্টিন উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি ভেঙেছে ও গাছপালা উপড়ে গেছে।’

ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা ১২ শতাধিক উল্লেখ করে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এসব ঘরবাড়ির কয়েক হাজার বাসিন্দা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। আপাতত তারা আশ্রয়কেন্দ্রে থাকবেন, ঘরবাড়ি মেরামতের পর নিজেদের ঘরে উঠতে পারবেন।’

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে চেয়ারম্যান মুজিবুর বলেন, ‘অন্তত ১৮০০ গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আহত এক নারী সেন্টমার্টিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বর্তমানে সেন্টমার্টিনে ঝোড়ো বাতাসের গতি কমেছে। হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে।’

জেলা আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিকাল ৩টার দিকে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে গতিপথ বদলে মিয়ানমারের দিকে চলে গেছে ঘূর্ণিঝড়টি। এখন ভয়ের কিছু নেই। আঘাতের প্রভাবে ঝড়বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এটি দুর্বল হয়ে পড়ায় প্রভাব কমে গেছে।’

এই বিভাগের আরও খবর